রাহাত সাইফুল : বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকাদের আমরা যে নামে চিনি তাদের
অধিকাংশের পরিবর্তিত নামেই তারা পরিচিত। নামের এ পরিবর্তন নির্মাতারাই
করেছেন। তাই এ অভিনয়শিল্পীদের প্রকৃত নাম সাধারণ মানুষের অজানা। নাম
পরিবর্তনের এ প্রচলন বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকে হয়ে আসছে। সেই
ধারাবাহিকতায় এখনো ঢাকাই চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকাদের নতুন নাম দেয়া হচ্ছে।
তবে নামের এ পরির্বতন বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে বলে জানা যায়।
শিল্পীদের
নাম পরিবর্তন করার তালিকায় রয়েছেন গুণী নির্মাতা এহতেশাম। তার আবিষ্কার
করা নায়িকাদের নামের শুরুতে ‘শাব’ শব্দটি যুক্ত করতেন। এরই ধারাবাহিকতায়
শাবানা, শাবনূরদের নাম তিনি রেখেছেন। এটাকে অনেকে বলছেন তার স্টাইল। তবে
কেন শিল্পীদের নাম পরিবর্তন করা হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্মাতা সোহানুর
রহমান সোহান বলেন, ‘একজন সিনেমার তারকার নাম যেন সিনেমাটিক হয়
তাই নামের পরিবর্তন করা হয়। নামটা যেন দর্শক অনায়াসে পছন্দ করে। এ জন্যই
নতুন নাম দেয়া হয়।’ এ নির্মাতাও অনেক শিল্পীর নতুন নাম দিয়েছেন।
এ
প্রজন্মের নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘চলচ্চিত্রে একই নাম
একাধিক হলে শিল্পীর নাম পরির্বতন করা হয়ে থাকে। নামটা যেন সবার মনে রাখতে
সহজ হয় তাই নামের পরিবর্তন করা হয়। সিনেমাপ্রেমীরা হয়তো তার প্রিয় তারকার
প্রকৃত নামটি জানেন না। তাই ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় দশ তারকার প্রকৃত
নাম নিয়ে এ রচনা।
রত্না থেকে শাবানাষাটের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবানা। তিনি ১৯৬৭ সালে
চকোরী
চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে অভিনয় করে চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে
তার। শাবানার প্রকৃত নাম রত্না। তার ভালো নাম আফরোজা সুলতানা। পরিচালক
এহতেশাম তার নাম রাখেন শাবানা। তারপর থেকে তিনি শাবানা নামেই সবার কাছে
পরিচিত।
পপি থেকে ববিতাসত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের
অশনি সংকেত
চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। তার
প্রকৃত নাম ফরিদা আক্তার পপি। চলচ্চিত্রে তাকে ববিতা নাম দেয়া হয়। এরপর
থেকে তাকে সবাই এই নামেই চেনেন।
নুপুর থেকে শাবনূরজনপ্রিয়
চিত্রনায়িকা শাবনূর। যার প্রকৃত নাম নাম কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর।
নির্মাতা এহতেশাম তার নাম পরিবর্তন করে শাবনূর দিয়েছেন। তার পরিচালিত
চাঁদনী রাত সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন করেন শাবনূর। এর পর থেকে তার অভিনীত সব সিনেমাতেই তিনি শাবনূর নামটি ব্যবহার করেছেন।
ইমন থেকে সালমান শাহনব্বইর
দশকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।
নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান তাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন। চলচ্চিত্রে তাকে
নাম দেয়া হয় সালমান শাহ। তারপর থেকে সবাই সালমান শাহ নামেই চেনেন। এ
নির্মাতার
কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র।
রানা থেকে শাকিব খানবর্তমান সময়ের ঢালিউড কিং শাকিব খান। তার প্রকৃত নাম মাসুদ রানা হলেও তিনি শাকিব খান নামে পরিচিত। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত
অনন্ত ভালোবাসা সিনেমার মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। এর পরে তার অভিনীত সব সিনেমায় শাকিব খান নামটিই ব্যবহার করা হয়েছে।
শাকিল থেকে শাকিল খানএক সময়ের আলোচিত চিত্রনায়ক শাকিল খান। যার প্রকৃত নাম ছিল শাকিল। সোহানুর রহমান সোহানের
আমার ঘর আমার বেহেস্ত
সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। সোহানুর রহমান সোহান তার নামের
পরে খান শব্দটি যুক্ত করে দেন। এর পর থেকে তিনি শাকিল খান নামে-ই সবার কাছে
পরিচিত।
আসলাম থেকে মান্নাজনপ্রিয় চিত্রনায়ক
মান্না। ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি।
এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। তার প্রকৃত নাম এস এম আসলাম
তালুকদার।
হাসনা হেনা থেকে আঁচলবর্তমান সময়ের গ্ল্যামার কন্যা চিত্রনায়িকা আঁচল আঁখি। তার প্রকৃত নাম হাসনা হেনা আঁখি।
বেইলি রোড
সিনেমার পরিচালক লিটন এরশাদ তার না রাখেন আঁচল আঁখি। এটিই ছিল আঁচল আঁখি
অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। এর পর তার অভিনীত সব সিনেমায় তিনি আঁচল আঁখি নামটি
ব্যবহার করছেন।
প্রিয়াংকা থেকে প্রিয়ন্তীনবাগত প্রিয়ন্তী মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের
চুপি চুপি প্রেম সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তার প্রকৃত নাম প্রিয়াংকা। পরিচালক তার নাম দিয়েছেন প্রিয়ন্তী। তিনি এখন এ নামেই পরিচিত।